মেডিটেশন করা কেন প্রয়োজন

শরীরকে সুস্থ রাখতে আমাদের কত না আয়োজন! কিন্তু যতটা আয়োজন আমরা শরীরকে সুস্থ রাখতে করি ঠিক ততটা আয়োজন আমরা মনকে সুস্থ রাখতে সচারাচর করি না। তাই মনকে সুস্থ রাখতে দিনের কিছুটা সময় নিজেকে দেয়া উচিত৷
অ্যাংজাইটি, প্যানিক ডিসঅর্ডার, ডিপ্রেশন, বাইপোলার ডিজঅর্ডার ইত্যাদি কিছু মানসিক সমস্যার জন্য বিশেষজ্ঞরা সবাইকে মেডিটেশন করার জন্য উৎসাহিত করছেন। কিন্তু মেডিটেশনের গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা, তাই আজ কথা বলবো মেডিটেশন কি ও এর উপকারিতা সম্পর্কে৷

মেডিটেশন কি

মেডিটেশন করার কারণ হচ্ছে মনকে শান্ত করা৷ মেডিটেশনের মাধ্যমে একজন ব্যাক্তি তার বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মনকে নিজের কাছে নিয়ে আসার চেষ্টা করে ও মনকে শুধুমাত্র
বর্তমানে ধরে রাখার চেষ্টা করে। যান্ত্রিক জীবনে আমাদের মন বর্তমানে না থেকে শুধুমাত্র ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকে ও অতীত নিয়ে আফসোসে ভোগে। যা আমাদের মানসিক অবসাদের মধ্যে ফেলে দেয়। তাই মনকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসাটা অনেক বেশি জরুরী যা করতে মেডিটেশন আমাদের সাহায্য করে।

মেডিটেশন করার নিয়ম :

প্রথমেই নিরিবিলি শান্ত একটি জায়গা বেছে নিতে হবে। যে স্থানে মেডিটেশন করবেন সেখানের আবহাওয়া যাতে খুব বেশি ঠান্ডা কিংবা গরম না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে৷ মেডিটেশনে কিভাবে বসতে হয় এ নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু মেডিটেশন এমন ভাবে বসা উচিত যাতে নিজের অস্বস্তি না লাগে,
অস্বস্তিকর কোন পজিশনে বসলে মেডিটেশনের মনোযোগ নষ্ট হওয়া সম্ভাবনা রয়েছে৷ তাই যেভাবে আপনি আরামবোধ করবেন ঠিক সেখাবেই আসন গ্রহণ করুন৷ তবে চেয়ারে বসলে পা যেন মাটিতে লেগে থাকে তা লক্ষ্য রাখুন৷ যেসব জিনিসে আপনার ডিস্ট্রাকশন হতে পারে সেগুলো কিছুক্ষণের জন্য সামনে থেকে সরিয়ে রাখুন। নতুন মেডিটেশন শুরু করলে পাঁচ থেকে দশ মিনিটের বেশি মনোযোগ ধরে রাখা সম্ভব হয় না। এতে কিন্তু হতাশ হওয়া যাবে না কারণ প্র্যাকটিসের মাধ্যমে আপনার মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা দিন দিন আরো বাড়বে। তাই শুরুতে মনোযোগ ধরে রাখতে কষ্ট হলেও নিয়মিত মেডিটেশন চালিয়ে যান। মনকে কিছুক্ষণ শান্ত করার চেষ্টা করে চোখ বন্ধ করুন এবং বড় বড় নিঃশ্বাস নিন৷ নিঃশ্বাস নেয়ার সময় পেট ফুলে যাবে। নিঃশ্বাস কয়েক সেকেন্ডআটকে রেখে ধীরে ধীরে তা মুখ দিয়ে ছাড়তে হবে। নিঃশ্বাসের এই এক্সারসাইজ কিছুক্ষণ চালিয়ে যেতে হবে। মেডিটেশন করার সময় চেষ্টা করবেন নিজের মনে আশা সকল নেগেটিভ চিন্তা দূর করার জন্য। বাইরের সবকিছু ভুলে গিয়ে কিছুক্ষণ শুধুমাত্র নিজের অস্তিত্ব অনুভব করুন, আপনার হার্টবিটের শব্দ, নিশ্বাস নেয়া, নিঃশব্দ রুম সকল কিছু উপভোগ করার করুন। কিছুক্ষণের জন্য বর্তমানে বাঁচুন৷

মেডিটেশনের উপকারিতা :

নিয়মিত মেডিটেশন করার অনেক উপকারিতা রয়েছে। মেডিটেশন আসলেই কার্যকারী কিনা এ নিয়ে সারা বিশ্বে নানা রকম গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলেছে। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে মেডিটেশন এর মাধ্যমে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পুরো বিশ্বে বিষন্নতা ও অ্যাংজাইটি ভোগা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে৷ মেডিটেশন এর ফলে মনের অস্থিরতা ও উদ্বেগ অনেকটা কমে আসে। আমরা অনেকেই নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার ফলে আমাদের প্রতিদিন নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। মেডিটেশন আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ বাড়াতে সাহায্য করে৷ অনেকের জীবনের ছোট বড় সিদ্ধান্ত নিতে অনেক বিভ্রান্তিতে পরতে হয়, মেডিটেশন আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাকেও বাড়িয়ে তোলে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরপরই আমাদের জীবনের নানা রকম স্ট্রেস শুরু হয়,
স্ট্রেসের সাথে সূচনা হয় নানা রকম শারীরিক রোগের, মেডিটেশন আমাদের স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট করতেও সাহায্য করে।
পড়ালেখা অফিসে ও নানা রকম কাজে দীর্ঘ সময় মনোযোগ ধরে রাখতে মেডিটেশন আমাদের সাহায্য করে। মেডিটেশন বিষন্নতা কমাতেও ভূমিকা পালন করে, নিয়মিত মেডিটেশনের বিষন্নতার
উপসর্গ কমে আসে৷

সুতরাং বোঝা যাচ্ছে মেডিটেশনে রয়েছে অনেক ধরনের উপকারী যা আমাদের জীবনকে সহজ করে তুলতে পারে৷ তাই নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করে প্রতিদিন কিছুক্ষণ মেডিটেশন করুন। এটি আপনার মন ও হেলথ দুটোই ভালো রাখবে৷

Leave a Reply