অ্যাংজাইটি কমানোর উপায়

 মানুষ প্রতিদিন নানা বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত কিংবা উদ্বিগ্ন হতে পারে সেটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু অকারণ বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা কিংবা উদ্বিগ্ন হয়ে পরলে, যার স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা দেয় তা নিয়ন্ত্রণ করা খুব বেশি জরুরী। অকারণ দুশ্চিন্তা যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় মেডিকেলের ভাষায় তাকে বলা হয় ” জেনারেল অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার”। বর্তমান লাইফস্টাইল এর কারনে অধিকাংশ মানুষ এখন অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের আক্রান্ত। অনেক সময় এ ডিসঅর্ডার নিয়ন্ত্রণের জন্য চিকিৎসকের প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রাথমিক অবস্থায় নিজের জীবনযাত্রা কিছুটা পরিবর্তন এনে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই জেনে নেওয়া যাক কিভাবে আপনার জেনারেল অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন :

১। মেডিটেশন : 

মেডিটেশনের রয়েছে  অনেক উপকারীতা। নিয়মিত মেডিটেশনের ফলে মন শান্ত ও অস্থিরতা কমে। তাই উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিন মেডিটেশন করুন। মেডিটেশনের জন্য শান্ত ও শব্দহীন পরিবেশ বেছে নিতে হবে৷ প্রথম দিকে মেডিটেশনে মনোযোগ দিতে কিছুটা কষ্ট হবে। কিন্তু নিয়মিত করার ফলে এটি অনেকটাই আয়ত্তে চলে আসবে৷ 

২। নিঃশ্বাসের ব্যায়াম : 

এটি আমাদের ব্রেইনকে শিথিল রাখতে সাহায্য করে। তাই মনে অস্থিরতা অনুভব হলে নিঃশ্বাসের ব্যায়াম করতে হবে। প্রথমে নাকে জোরে দম নিতে হবে, এরপর কিছু সময় আটকে রাখতে হবে৷ কয়েক সেকেন্ড পর ধীরে ধীরে নিঃশ্বাসের ছাড়তে হবে। এমন করে ১০ বার করতে হবে। এটির ফলে বুক কিছুটা হালকা অনুভব হবে৷ 

৩। প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকুন :

দিনের কিছুটা সময় চেষ্টা করুন মোবাইল, কম্পিউটার, টেলিভিশন সহ সব ধরনের প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকতে। প্রযুক্তি আমাদের উদ্বেগের প্রবণতা অনেক বেশি বাড়িয়ে তোলে। তাই সে সময় কাটাতে বই পড়ুন, নতুন কোনো কিছু রান্না করুন বা ছাদে কিংবা বারান্দায় কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করুন৷ প্রযুক্তি সাথে সময় কাটানো কমাতে পারলে উদ্বেগের সমস্যা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসবে। 

৪। শারিরীক পরিশ্রম : 

প্রতিদিন কিছুটা সময় শারিরীক পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় এমন কাজ করতে হবে। যেমন লিফট ব্যবহার না করে সিড়ি ব্যবহার করতে হবে কিংবা রিক্সায় না উঠে হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। 

এছাড়া নিয়ম করে ৪০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করা যেতে পারে। শারিরীক পরিশ্রমের ফলে আমাদের শরীরে ডোপামিন হরমোন রিলিজ হয় যা আমাদের মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। 

৫। সুস্থ জীবনধারা : 

উদ্বেগ কমাতে আমাদের প্রতিদিনের খাবার এবং জীবন যাত্রারও পরিবর্তন আনতে হবে৷ খাবারের তালিকায় পুষ্টিকর খাবার রাখতে হবে। ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে৷ শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পানি পান করতে হবে। চিনি ও প্রসেসর ফুড খাবার কমাতে। ঘন ঘন চা কফি খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে৷ কারন ক্যাফেইনযুক্ত খাবার আমাদের উদ্বেগের প্রবণতাকে আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। রাত জাগার অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করে দ্রুত ঘুমানোর অভ্যাস তৈরি করতে হবে। 

৬। ছুটি নিন : 

যান্ত্রিক ও একঘেয়ে জীবন অনেক সময় উদ্বেগের কারণ হয়ে ওঠে৷ তাই মাঝে মধ্যে একঘেয়ে রুটিন থেকে কিছুটা বিরতি নিন ও প্রিয় মানুষদের সাথে কিছুটা সময় কাটান বা ভালো লাগার কোনো কাজ করুন।

উদ্বেগের চিকিৎসা : 

অনেক সময় উদ্বেগ ঘরে বসে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না
তখন মনোবিজ্ঞানের শরণাপন্ন হওয়া জরুরী। চিকিৎসক তখন অবস্থা বুঝে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে থাকে। উদ্বেগে আক্রান্ত রোগীদের প্রথমে কাউন্সেলিং ও সাইকোথেরাপি দেখা হয়। এতে রোগের বেশ উন্নতি লক্ষ্য করা যায়৷ এবং অনেক ক্ষেত্রে রোগীকে ঔষধের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে উদ্বেগ রোগকে সম্পূর্ণ নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব।

Leave a Reply