শিশুর অতিরিক্ত ডিভাইস নির্ভরশীলতা

এমন একটা সময় আমরা পার করছি যেখানে ছোট বড় সকলে ইন্টারনেট কিংবা বিভিন্ন ডিভাইসের উপর আসক্ত। বাড়ির ছোট সদস্যের আবদার কিংবা কান্নাকাটির ঝামেলা এড়িয়ে যাবার জন্য অনেক বাবা-মাই অসচেতন ভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করার অনুমতি দিয়ে দেয়। যার ফলে শিশু স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে শুরু করে নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হন। জেনে নেয়া যাক অতিরিক্ত ইন্টারনেট বা ডিভাইস ব্যবহার শিশুর উপর কিভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।

স্থূলতা : 

যে বয়সে মাঠে ছুটে বেড়ানোর কথা, সে বয়সে তারা ঘরের কোণে ডিভাইজ নিয়ে শুয়ে বসে দিন কাটাচ্ছে যার ফলে তাদের স্থূলতা দেখা দিচ্ছে৷ বয়স বাড়ার সাথে নির্দিষ্ট পরিমাণ ওজন বাড়াটা স্বাভাবিক কিন্তু বয়স ও উচ্চতা থেকে দিনের পর পর অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া চিন্তা বিষয়৷ এখনকার শিশুরা জাংক ফুড বেশি খেয়ে থাকে আবার যখন তাদের কোনো শারিরীক পরিশ্রম হয় তখন ধীরে ধীরে তারা প্রয়োজনের তুলনায় মুটিয়ে যেতে থাকে৷ ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণে অল্প বয়সে তাদের নানারকম স্বাস্থ্য জনিত সমস্যা হতে থাকে। অনেকের ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপের মতো সমস্যা দেখা দেয়। মেয়ে শিশু হলে অল্প বয়সে হরমোনাল সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে৷ এছাড়া হার্টে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়, যার জন্য অনেক সময় অপারেশন করা লাগতে পারে। স্থূলতার কারণে শিশু মৃত্যুর হাড়ের সংখ্যা কম নয়।

চোখে সমস্যা : 

অতিরিক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারের চোখে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে ঢাকায় স্কুলে যাওয়া শিশুদের মধ্যে ৪০% শিশুর চোখের পাওয়ারে সমস্যা রয়েছে৷ শিশুরা অনেক সময় নিজেদের সমস্যার কথা বোঝাতে পারে না আর দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের অভিভাবকরা শিশু কোনো শারিরীক সমস্যার কথা বললে প্রথম অবস্থায় তারা তেমন গুরুত্ব সহকারে নেন না৷ সেক্ষেত্রে সমস্যা শনাক্ত দেরি হয়ে যায়।  

মানসিক সমস্যা : 

প্রযুক্তির প্রভাব পরে শিশু মনেও। দেখা গেছে যেসব শিশুরা অতিরিক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা অস্থির প্রকৃতি হয়ে থাকে। লেখাপড়া সহ যাবতীয় কাজে তারা বেশিক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না। এমনকি শিশুদের বিষন্নতাও দেখা দিতে পারে৷ শিশুদের বিষন্নতা হতে পারে এ কথা অনেকেই মানতে চায় না। কিন্তু এখন এটি প্রমাণিত যে অতিরিক্ত প্রযুক্তির ব্যবহার শিশুকে বিষন্ন করে তোলে। বিষন্নতায় ভোগা শিশুরা সারাক্ষণ ক্লান্তি অনুভব করে, তারা অস্থির হয়ে উঠে, ঠিকমতো খেতে পারে না, কোনো কারণ ছাড়া তাদের শরীরে ব্যথা করবে যার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই৷ তাদের মনের অবস্থা কোনোভাবেই তারা ব্যাখা করতে পারে না। 

ঘুমের সমস্যা : 

একজন ৩ থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুর ১১ থেকে ১২ ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন ও ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুর ১০ থেকে ১২ ঘন্টা ঘুম। অতিরিক্ত প্রযুক্তির ব্যবহার তাদের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়, বিশেষ করে ঘুমাতে যাবার কিছুক্ষণ আগে যেকোনো ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করলে৷ ঘুমের সমস্যা থাকলে মাঝরাতে শিশু ঘুম ভেংগে যাবে আবার অনেক সময় একেবারেই ঘুম হয় না। আবার অনেকের রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হবার পরেও খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে পরে। শিশুর ঘুমের সমস্যা হলে সারাদিন তারা ক্লান্ত থাকে ও ঘুম ঘুম ভাব থাকে। যার ফলে দৈনন্দিন কোন কাজে তারা উৎসাহ পায় না।

তাই সকল সচেতন বাবা-মার উচিত তার শিশুকে ডিভাইস কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহারে কিছু নিয়ম কানুন বেঁধে দেওয়া। অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহার করছে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখা সকল বাবা-মার দায়িত্ব।

Leave a Reply