কিডনি রোগের নীরব লক্ষণ

আমাদের দেহের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অনেক গুরুত্বপূর্ণ, আমাদের সুস্থ ও স্বাভাবিক রাতে তারা আমাদের অজান্তে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের দেহের ভেতরের প্রতিটি অর্গান আমাদের সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবার আগে তেমন একটা লক্ষণ দেখা দেয় না, আবার লক্ষণ দেখা দিলেও তা এত সামান্য হয় যে আমরা এড়িয়ে যাই। তেমনই এক অঙ্গের নাম হচ্ছে কিডনি। কিডনিতে সমস্যা দেখা দিলে শুরুর দিকের লক্ষণ থাকে খুবই সামান্য, খুব বেশি গুরুতর অবস্থায় যাওয়ার আগে কিডনির সমস্যার লক্ষণ প্রকাশ পায় না। কিন্তু যে কোন সমস্যা শুরুতেই যদি তার শনাক্ত করা যায় তাহলে তা থেকে সেরে উঠার উপায়ও সহজ হয়ে যায়। 

কিডনির প্রধান কাজ হচ্ছে রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ, অতিরিক্ত পানি এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক পদার্থ শোধন করে। এই টক্সিনগুলো প্রথমে মূত্রাশয়ে জমা হয়, যা পরে প্রস্রাব আকারে বের হয়। তাই শুরু থেকে সচেতন থাকতে কিডনি সাধারণ কিছু সমস্যা ও এর লক্ষণগুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

কিডনির রোগের লক্ষণ : 

কিডনিতে নানা ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে, তবে কিডনির যেকোনো সমস্যাতেই কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে৷ যেমন : 

১। কান্তিবোধ : 

সারাদিন পরিশ্রমও অনেক কাজের ফলে মানুষের শরীরে ক্লান্তি আসবে এটাই স্বাভাবিক৷ কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় কোন কারণ ছাড়াই ক্লান্তি লাগছে, পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম সহ কোনো উপায়ই এ ক্লান্তি ভাব দূর করা যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে তারা অনেক সময় কিডনির পরীক্ষা-নিরীক্ষার নানারকম টেস্ট দিয়ে থাকেন। কারণ কিডনিতে কোন ধরনের সমস্যা হলে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয় এবং রক্তস্বল্পতার কারণেই মূলত ক্লান্তিবোধ হয়। 

২। চুলকানি : 

কিডনিতে সমস্যা দেখা দিলে শরীর থেকে সঠিকভাবে ইউরিয়া বের হতে পারে না। ফলে তা ত্বকের নিচে জমা থাকে। এর ফলে ত্বকে চুলকানি সহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। প্রাথমিক অবস্থায় ত্বকের রং পরিবর্তন হয়ে গেলে ও চুলকানি হলে মানুষ চর্ম চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। চুলকানি নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলেও কিডনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। ত্বকের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায় কিডনি বিকল এমন ঘটনাও কম নয়। 

৩। শরীরে ফোলাভাব : 

কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে শরীর থেকে সহজে পানি বের হতে চায় না। ফলে চোখ, হাত, পা ইত্যাদি স্থান ফুলে যায়।  অনেকে শরীরের এসব ফোলা ভাব এলার্জির সাথে মিলিয়ে এড়িয়ে যায়। 

এলার্জিজনিত কারণে কিংবা অন্যান্য কারণে শরীরের ফোলা ভাব দু সপ্তাহের বেশি কখনো স্থায়ী হয় না। কিন্তু কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে শরীরের ফোলা ভাব অনেকদিন স্থায়ী থাকে। তাই দীর্ঘদিন ধরে শরীরের কোন অংশ ফুলে থাকলে কিংবা যদি মনে হয় সে স্থানে পানি জমে আছে তাহলে এড়িয়ে না গিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয় জরুরী। 

৪। প্রসাবের পরিবর্তন :

কিডনিতে সমস্যা দেখা দিলে প্রস্রাবের পরিবর্তন একটি সাধারণ লক্ষণ। অনেক ক্ষেত্রে প্রস্তাবের রং পরিবর্তনএবং কখনো প্রস্রাবের সাথে রক্ত যেতে পারে। অনেক কিডনি রোগীদের প্রস্রাব করার সময় পেটে ব্যথা হয় কিংবা জ্বালাপোড়া হয়ে থাকে। কিডনিতে সমস্যা দেখা দিলে প্রস্রাবের সাথে শরীর থেকে অতিরিক্ত প্রোটিন বের হয়ে যায়। প্রস্রাবের মাধ্যমে প্রোটিন বের হওয়ার কারণে প্রস্রাবে ফেনাভাব দেখা দেয়৷ কিডনি রোগের ফলে কখনো প্রস্রাবের মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যায় কখনো বা কমে যায়। বিশেষ করে রাতে প্রস্রাবের বেগ অতিরিক্ত থাকে। অনেক সময় প্রস্রাবের বেগ অনুভব হলেও প্রসাব হয় না। তাই এমন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। 

৫। শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা : 

কিডনি রোগ হলে নিঃশ্বাসের সমস্যা হতে পারে। কিডনিতে সমস্যা হলে শরীর থেকে তার অপ্রয়োজনীয় পানি বের হতে পারে না। 

ফলে কিছু পানি দিয়ে জমা হয় ফুসফুসে। তখন হাঁপানির মতো শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। অনেকের শ্বাসকষ্টের জন্য রাতের ঘুম ভেঙ্গে যায়। স্বাভাবিকভাবে রোগীরা প্রথম অবস্থায় ভাবে হাঁপানি সমস্যা হয়েছে, কিন্তু পরবর্তীতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে অনেক সময় কিডনি রোগ শনাক্ত করা হয়। 

৬। পিঠ থেকে কোমড় অবধি ব্যথা : 

বেশিরভাগ কিডনি রোগী যে সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান তা হলো কোমরে ব্যথা। কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে অনেক সময় মাংসপেশিতে টান লাগে৷ তখন পিঠ থেকে কোমর অবধি ব্যথা অনুভব হয়। ব্যথার পাশাপাশি বমি বমি ভাব কখনো বা বমি এবং খাবার রুচি কমে যায়। 

যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তা শনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

Leave a Reply