আবহাওয়া পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যের যত্ন

শীত কমতে থাকলে শুরু হয়ে যাবে ঋতু পরিবর্তন, আর ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টা কিছু রোগের প্রবণতা বেড়ে যায়।
তাই আবহাওয়া পরিবর্তনের আগে আমাদের সচেতনতা অবলম্বন করা অনেক বেশি প্রয়োজন। তাই জেনে নেয়া যাক আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় কিভাবে নিজের বাড়তি যত্ন নেওয়া উচিত যাতে করে আমরা রোগ আক্রান্ত হয়ে না পরি।

১। টনসিলে সমস্যা : 

আমাদের গলার দুইপাশে দুটি গ্রন্থিকে টনসিল বলা হয়৷ এই গ্রন্থি আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমের অংশ৷ বছরের যেকোনো সময় টনসিলের প্রদাহ দেখা দিতে পারে৷ যাদের টনসিলের প্রদাহ সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় বার বার এই সমস্যা হয়ে থাকে। তবে আবহাওয়া বদলের সময় সবচেয়ে বেশী টনসিলের সমস্যা দেখা দেয়৷ ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে টনসিলে সমস্যা দেখা দেয়। শীতের দিনে মৌসুমি ফ্লু হওয়ায় টনসিলাইটিসের প্রকোপ বাড়ে। টনসিলে সমস্যা দেখা দিলে সাধারণত মাঝারি থেকে তীব্র জ্বর থাকতে পারে, গলাব্যথা, খাবার গিলতে কষ্ট, মুখে দুর্গন্ধ, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া ইত্যাদি৷ টনসিলে সমস্যা হলে দুদিকের লাল হয়ে ফুলে গেছে। টনসিলে সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত৷ ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে সমস্যা হলে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকে। অনেকে মনে করেন টনসিলে সমস্যা হলে অপারেশন করতেই হবে কিন্তু তা নয়। কিছুক্ষেত্রে টনসিলে বার বার ইনফেকশন হতে থাকে, শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয় ও বছরে পাঁচ থেকে সাত বার ইনফেকশন দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে টনসিল অপারেশন করে ফেলে দিতে হয়৷ রোগীর অবস্থা বুঝে চিকিৎসক পরামর্শ দিয়ে থাকেন৷ সঠিক সময় টনসিলের চিকিৎসা না করালে বড় ধরণের জটিলতা হতে পারে। 

২। হাঁপানি বা এ্যাজমা : 

দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ এবং সংবেদনশীলতায় স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় যাকে বলে হাঁপানি বা অ্যাজমা। হাঁপানি রোগ হলে শ্বাসকষ্ট সাথে শুকনো কাশি থাকে,  হঠাৎ দমবন্ধ ভাব অনুভব করে থাকে৷ আবহাওয়া বদলের সময় হাঁপানির টান উঠার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি বেড়ে যায়৷ এছাড়া বছরের যেকোনো সময়ই হাঁপানির সমস্যা দেখা দিতে হবে।  হাঁপানি থেকে দূরে থাকতে হলে এলার্জিজনিত সব কিছু থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে৷ এলার্জি টেষ্টের মাধ্যমে জেনে নিতে হবে রোগির কিসে এলার্জি তা থেকে দূরে থাকতে হবে৷ হাঁপানি রোগিদের ঘর থেকে বের হওয়ার আগে মাস্ক পরিধান করতে হবে৷ ঘরে কার্পেট রাখা যাবে না। এমনকি ফুলের রেণু থেকেও হাঁপানির টান উঠতে পারে। কোনো বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তা বা মানসিক অশান্তির মধ্যে থাকলে অনেক সময় হাঁপানির সমস্যা বেড়ে যায়। তাই নিজের মনকে যতটা সম্ভব শান্ত রাখতে হবে৷ হাঁপানি কখনো পুরোপুরি ভালো হয়ে যায় না, তবে জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন করে ও কিছু ঔষধ পত্রের মাধ্যমে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব।

৩। নিউমোনিয়া : 

নিউমোনিয়া হলে ফুসফুস ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়৷ ফুসফুসের ভিতরে বাতাসের থলিগুলো ফুলে যায়৷ তখন রোগীর শ্বাস নিতে কষ্ট হয়৷ নিউমোনিয়া হলে সাধারণ লক্ষন হিসেবে জ্বর আসে ও কফযুক্ত কাশি হয়৷ এছাড়া শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে৷ আরো দেখা যায় বমি বমি ভাব, খাবারের প্রতি অনিহা, মাথাব্যথা, বুকে ব্যথা ইত্যাদি৷ নিউমোনিয়াকে অবহেলা করলে অনেক সময় এটি তীব্র আকার ধারণ করতে পারে৷ অনেক সময় নিউমোনিয়ার লক্ষন দেখা দিলে সাধারণত ঠান্ডা কাশি মনে করে অনেকে এড়িয়ে চলে। কিন্তু শীতের আবহাওয়ায় ঠান্ডা কাশির মতো লক্ষন দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসক এর কাছে গিয়ে পরীক্ষা করে নিতে হবে নিউমোনিয়া হয়েছে কি না। সঠিক সময় চিকিৎসা শুরু হলে নিউমোনিয়া গুরুতর আকার ধারণ করতে পারবে না৷

সকল ধরনের রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় ধুলোবালি সহ ঠান্ডা জাতীয় সকল খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। এসময় আবহাওয়া অনেক বেশি আদ্র হবার কারণে খুব সহজে ঠান্ডা কাশি লেগে যায়। যেকোনো ধরনের ইনফেকশন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেতে হবে। জীবনযাত্রায় কিছুটা পরিবর্তন আনলে ও সাবধান থাকলে সহজে রোগ আক্রান্ত হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা কমে যাবে।

Leave a Reply