কোরবানি মাংস খেতে হবে নিরাপদে

কুরবানী ঈদ মানে অনেক মাংস খাওয়া৷ বছরে একটি মাত্র দিনই ঈদ আসে বলে অনেকেই স্বাস্থ্য ঝুঁকি ভুলে গিয়ে অফুরন্ত মাংস খেতে থাকে। এতে যাদের দীর্ঘমেয়াদীর রোগ রয়েছে তাদের নানা ধরনের সমস্যার মুখে পরতে হয় এবং যাদের কোন দীর্ঘমেয়াদীর রোগ নেই দেখা যায় তারাও নানা রকম সমস্যা আক্রান্ত হয়।
তাই জেনে নেয়া যাক অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে।

অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে যেসব স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে :

১। গ্যাস্ট্রিক :

গরুর মাংস সাধারণত অতিরিক্ত তেল মসলা দিয়ে রান্না করা হয়। আর গরুর মাংসতে প্রাকৃতিকভাবেই অনেক চর্বি থাকে। যার ফলে পাকস্থলীতে এসিড জমা হয়, এতে হাইপার এসিডিটি হতে পারে। অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার জন্য পেটে আলসার অবধি হতে পারে৷ বুক ব্যথা কিংবা জ্বালা করা, পেট ফেঁপে থাকা, মল ত্যাগে সমস্যা ইত্যাদি সাধারণ গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ। অনেক সময় তীব্র পেট ব্যথা হতে পারে যা সহ্যের বাইরে চলে যায় তখন রোগীকে সাথে সাথে হাসপাতালে নিতে হয়৷ এ সময় বুকে চাপ অনুভব করে অনেক সময় হার্ট অ্যাটাক এর মত অনুভূতি হতে পারে। তবে তা হার্ট অ্যাটাক নাকি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তা শুধুমাত্র চিকিৎসকের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সনাক্ত করা সম্ভব।

২। ডায়রিয়া :

পাকস্থলীতে ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে ডায়রিয়া হতে পারে। ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়া সাধারণত খাবারের মাধ্যমে আমাদের পাকস্থলীতে প্রবেশ করার সুযোগ পায়। কোরবানীর সময় হঠাৎ করে অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার ফলে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়তে দেখা যায়। অতিরিক্ত তেল মশলার কারণে ডায়রিয়া হতে পারে আবার দেখা যায় গরুর মাংস অনেকদিন ফ্রিজে রেখে খাওয়া হয় ফলে বাসি খাবারের জন্য ডায়রিয়া হতে পারে। ডায়রিয়ার পাশাপাশি বমি কিংবা বমি বমি ভাব হতে পারে। অনেক সময় ডায়রিয়া নিজে থেকে ভালো হয়ে গেলেও এক্ষেত্রে বেশিরভাগই এন্টিবায়োটিক এর প্রয়োজন হয়।

ডায়রিয়া হলে চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করা যাবে না।

৩। অন্যান্য সমস্যা :

যাদের অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা রয়েছে যেমন হৃদরোগ, ডায়াবেটিকস, কিডনি সমস্যা তাদের মাংস খাওয়ার আগে অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ডায়াবেটিক থাকলে অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে রক্তের সুগার বেড়ে ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, এছাড়া অতিরিক্ত গরুর মাংস হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে এবং উচ্চ রক্তচাপের জন্য সারা বছর ঔষধ খেতে হয় তাদের ক্ষেত্রে গরুর মাংস না খাওয়াই ভালো। দীর্ঘমেয়াদি যেকোনো ধরনের রোগ থাকলে কোরবানি ঈদের আগে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে কতটুকু মাংস খেতে পারবেন তা পরামর্শ করে নিতে হবে।

মাংস খাওয়ার উপায় :

স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে বলে কোরবানি ঈদে মাংস খাওয়া বন্ধ থাকবে তা হয় না। তাই কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে নিরাপদ উপায় গরুর মাংস রান্না করতে হবে। যেমন কোরবানির মাংস কাটার সময় যে কাটবে তাকে পরামর্শ দিতে হবে মাংসের চর্বি কেটে ফেলে দেওয়ার জন্য কারণ চর্বির মধ্যেই মূলত নানা ধরনের রোগের উৎস। গরুর মাংস রান্না সময় মাংসের সাথে পেঁপে কিংবা নানা ধরনের সবজি ব্যবহার করা যেতে পারে এতে মাংস সহজে নরম হয়ে যায় ও হজমে সমস্যা হয় না। এছাড়া গরুর মাংস উচ্চতাপে বেশি সময় নিয়ে রান্না করলে ক্যালোরি কিংবা নানা ধরনের রোগের ঝুঁকি কমে যায়৷ গরুর মাংস রান্না সময় ব্যবহার করতে পারেন টক দই কিংবা ভিনেগার এতেও মাংস সহজে নরম হয়ে যায়। এছাড়া রান্নার সময় যতটা সম্ভব বাড়তি তেল ও মাসলার ব্যবহার কম করতে হবে। গরুর মাংস অনেক ভালো প্রোটিনের উৎস, সঠিকভাবে খেতে জানলে গরুর মাংসেরও রয়েছে অনেক ধরনের উপকারিতা৷ অতিরিক্ত কোন কিছুই স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয় তাই গরুর মাংস খাবার আগে অবশ্যই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

Leave a Reply