অটিজম শিশুরা সমাজের বোঝা নয়

একটি সুস্থ সবল শিশু সবার কাম্য।কিন্তু কিছু শিশু জন্মের সময় মস্তিষ্কে বিকাশ জনিত সমস্যা নিয়ে পৃথিবীতে আসে। যাদের অটিজম বলা হয়ে থাকে৷ শিশুর জন্মের প্রথম তিন বছরের মধ্যে অটিজমের লক্ষণ ধরা পড়ে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এসব শিশুর চাই বাড়তি যত্ন কিন্তু অনেকে এদের সমাজের বোঝা বলে মনে করে। তাই সঠিক সময় চিকিৎসা শুরু করার জন্য জানা চাই অটিজম কি এবং এর লক্ষণ সম্পর্কে :

অটিজম কি 

সহজ ভাষা অটিজম হলো মস্তিষ্কের এক ধরনের ত্রুটি। যার ফলে একজন শিশু শারীরিকভাবে বৃদ্ধি পেলেও মানসিকভাবে বৃদ্ধি পায় না। জন্মের পরপরই অটিজম শিশুদের সমস্যা শনাক্ত করা যায় না কারণ শারীরিকভাবে তারা সম্পূর্ণ অন্যান্য স্বাভাবিক শিশুদের মতোই থাকে। জন্মের প্রথম তিন মাস শিশুর মধ্যে কোন অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যায় না। 

অটিজমের কারণ : 

বিশেষজ্ঞরা অটিজমের একদম সঠিক কারণ বের করতে পারেনি। তবে ধারণা করা হয় জিনগত কারণ ও পরিবেশগত সমস্যার কারণেই অটিজম শিশু জন্ম নিয়ে থাকে। পরিবেশের বিষাক্ত উপাদান শিশুর স্নায়ু কোষের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। 

কিছু বিষাক্ত উপাদানের জন্য গর্ভের শিশুর স্নায়ু কোষে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। ধারণা করা হয় মার্কারি, লেড, পোকা-মাকড় মারার বিষ, খাদ্য সংরক্ষণ করার রাসায়নিক দ্রব্য, খাদ্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধির কৃত্রিম রং ইত্যাদি অটিজম শিশু জন্ম নেয়ার জন্য দায়ী। গর্ভে থাকা অবস্থায় মা কিংবা শিশু কেউ যদি কোন ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয় তাহলে অটিজম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রুবেলা ভাইরাস এর মধ্যে অন্যতম। এছাড়া গবেষণায় আরো কিছু কারণ উঠে আসলেও অটিজমের সুনির্দিষ্ট কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। একদম সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া গেলে হয়তো অটিজম শিশুর জন্ম নেওয়া কিছুটা হলেও কমানো যেত।

অটিজমের লক্ষণ :

একজন অটিজম শিশু তার ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু জন্মের পর পরই এ সমস্যা শনাক্ত করা যায় না। জন্মের পর থেকে অন্তত তিন বছর সময় লাগে এ রোগ শনাক্ত হতে। কারো ক্ষেত্রে আগে শনাক্ত হয়ে যায় কারো বা তিন বছরের একটু বেশি সময় লাগে। শিশুর মধ্যে অস্বাভাবিকতা সাধারণত বাবা মায়েরা সহজে লক্ষ্য করতে পারে না ফলে চিকিৎসা গ্রহণ করতে ও রোগ শনাক্ত হতে কিছুটা দেরি হয়ে যায়। বেশিরভাগ শিশু এক থেকে দুই বছরের মধ্যে কিছু কিছু শব্দ বলা শিখে যায়, অটিজমের ক্ষেত্রে শিশুরা বয়স পার হয়ে যাবার পরেও কোন ধরনের কথা বলে না। আর কথা বললেও তা হয় খুব অস্পষ্ট। সাধারণভাবে শিশুরা খেলতে ও অন্য শিশুদের সঙ্গ পছন্দ করে, কিন্তু অটিজম শিশুরা অন্য বাচ্চাদের সাথে মিশতে চায় না ও খেলাধুলার প্রতি তাদের কোন প্রকার আগ্রহ থাকে না। তাদেরকে কোন খেলনা দেয়া হলে তা তারা দূর থেকে তাকিয়ে থাকে কিন্তু তার কাছে যায় না কিংবা ধরে দেখে না। কেউ ডাক দিলে সাড়া দেয় না এবং কেউ যদি তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে তাহলে তার চোখের দিকে না তাকিয়ে সে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে। অটিজম শিশুদের মধ্যে পুনরায়বৃত্তিমূলক আচরণ লক্ষ্য করা যায়। যেমন নির্দিষ্ট কিছু খাবার ছাড়া তারা খেতে চায় না, নির্দিষ্ট কিছু মানুষ ছাড়া তার কথা বলে না, নির্দিষ্ট কিছু খেলা বারবার খেলতে থাকে ও একই অঙ্গী ভংগী বারবার করে। অটিজম শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা যায় বাবা-মায়েরা অন্যান্য লক্ষণ এড়িয়ে গেলেও কথা বলা যখন বন্ধ করে দেয় কিংবা একদমই কথা বলে না তখন সবচেয়ে বেশি আতঙ্কিত হয়ে চিকিৎসকের কাছে যান।

Leave a Reply